Skip to main content

Intrigue-Unravel the mystery (01) | চক্রান্ত- রহস্য উন্মোচন (০১)


এক
৫ জুলাই, রাত ১টা


আকাশে চাঁদ বা তারা কিছুই নেই । ঝোপঝাড় আর রকেট সাইজের রাক্ষুসে মশায় ভর্তি পরিতেক্ত বডি ওয়ার্কসপে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করছে ঢাকার নিকষ কালো রাত । তার মধ্যে এখানে-সেখানে জটলা করছে কিছু লোক । আকাশের গায়ে তাদের কাঠামো ফুতে আছে । তারা নিচু স্বরে কথা বলছে । আলোচনার বিষয় যদিও গোপন কিছু নয়, তবুও পরিবেশ টান টান উত্তেজনা । কেউ কেউ সিগার ফুকছে আপন মনে । মেঘ আজ খুব নিচে নেমে এসেছে । আকশের গর্জনে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে । এই রাতের অন্ধকার-কে ভেঙ্গে খা খা করে দিলো এক মূহূর্তে জ্বলা সামনের বিএমডব্লিওর হেডলাইট । আবার নিস্তব্দতা ! গল্প করা লোকগুলো এখন আর কথা বলছে না, দেখে মনে হচ্ছে সামরিক মহড়ায় আছে যে যার মত পজিশন নিয়ে নিচ্ছে । আগত গাড়ি থেকে যে মানুষ নেমে আসছে তাকে ছায়া মূর্তি বলে মনে হবে, মাথায় কালো টুপি লম্বা ওভার কোর্ট কাল সু, মানুষ্টা লম্বা ছিমছাম গায়ে মেদ নেই চখ গাঢ় কালো, ক্লিন সেভ । গল্প করা একজন লোক আগত মানুষটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সামনে দাঁড়িয়ে ডান হাত কপালে ঠেকিয়ে আমি ক্যাপ্টেন বাছির উল্লাহ –স্যার । বাছির উল্লাহ অপারেশন কমান্ডার । বাছির উল্লাহ এর আগে বাংলাদেশ আর্মিতে দশ বছর এবং দুই বছর র‍্যাব –এ কাজ করে কিন্তু দূর্নীতি আর বিভিন্ন অপরাধের জন্য তাকে বহিষ্কার করা হয় ।  তার পর এক কম্পানির সিকিউরটি চিফ হিসাবে যোগ দেওয়ার পর সেখানেও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়, পুলিশ তাড়া করলে আন্ডারওয়ে চলে যায় । সেখান থেকে এই স্যার বলার লোক তাকে এখানে এনে অপারেশন কমান্ডার আর সেই সাথে অনেক টাকা দেয় । এই টিমের যত লোক আর সৈন্য আছে সবাই কম বেশী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত । আর এই টিমের নাম বা দল হল “আন্ডার লায়ন” । আন্ডার লায়ন এর প্রধান বা প্রতিষ্ঠাতা শেখ আফতাব । এখন থেকে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাও, “ব্রাভো ওয়ান আর ব্রাভো টু” ব্রাভো ওয়ান থাকবে ঢাকা, ব্রাভো টু অপারেশন রুমে –কমান্ডার বাছির উল্লাহ কে আদেশ দিলো শেখ আফতাব । সাদ্দাদ তোমার কাজ ক্লিয়ার ? ইয়েস স্যার, আমাদের তৃতীয় টিম চলে গেছে গন্তব্যে শুধু আপানার সিগ্নাল স্যার । গুড সাদ্দাদ এই জন্য তোমাকে আমার কাছে কেছে রাখি ।
আর হে বাজ –এর খবর কি ? তিন ঘন্টা আগে তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে স্যার, এখন পর্যন্ত আমাদের লোক বাজকে খোজে পায়নি । সাদ্দাদ এই খবর ভালো না যদি বাজ শত্রু পক্ষের হাতে ধরা পরে থাকে তাহলে আমাদের প্লেন বি অনুসরণ করা উচিৎ । যত দ্রূত সম্ভব বাজকে খুজে বের কর এবং শেষ করে দাও । কিন্তু স্যার বাজ আমাদের বিশ্বাসযোগ্য স্নাইপার আর কষ্ট সহিন্সু অকে মেরে ফেলা কি ঠিক হবে? আপনি বাজের কাজ আর পরিশ্রমী দেখে তার নাম দিয়েছেন “বাজ” যে উড়ে এসে জুড়ে বসার ক্ষমতা রাখে । সাদ্দাদ আমি যা বলেছি সেটাই কর আর না পারলে রাস্তা থেকে সরে যাও, শুধু দেখ শত্রুর হাতে পড়েছে কি না, আর না পড়ে থাকলে আমার সামনে দাড় করাও, ক্লিয়ার । ইয়েস –স্যার । সাদ্দাদ উরুফে শানু ফকির বাড়ি কলকাতা । সাদ্দাদ মাস্টার্স করেছে কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে, ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যোগ দেয় কলকাতা পুলিশ এছিপি র‍্যাংক –এ চাকরির দুই বছর পর তিন মার্ডার এবং পাঁচ ধর্ষণ অভিযোগে তাকে পুলিশ থেকে বহিষ্কার আর যাবতজিবন কারা শুনায় উচ্চ আদালত । এক বছর কারা ভোগ পরে জেল থেকে পালিয়ে চলে আসে বাংলাদেশে আর দেখা হয়ে যায় শেখ আফতাবের সঙ্গে । আফতাব আর সাদ্দাদ এর জন্ম ১৯৬৯ইং সালে একজন ঢাকায় অন্য জন কলকাতা । 


৩১ জুন,

উত্তরা ঢাকা ।
আরপিএস ডিটেকটিভ রায়হান রশিদ । যেটা তার বাসা সেটাই তার বিএসএস এজেন্ট অফিস । এখানে সারাদিন বসে বই পড়া আর সিগারেট আর কোন কাজ নাই । আর্মি থেকে চলে আসার পর থেকে একটাই কাজ জটিল কেস সমাধান করা । কিছুদিন আগেও দাপটের সাথে কাজ করে গেছে রায়হান রশিদ । এখন আর কোন কাজ নাই সারাদিন বই আর সিগার তার সঙ্গী । মাঝে মাঝে ঢাকার বিভিন্ন অলি-গলী হেটে বেড়ানো, রিক্সার গেরেজ, বারে বারে ঘুরা । আজ রায়হান রশিদ খুব ব্যস্ত, এক ভদ্র মহিলা ফোন দিয়ে বলেছে সে আসবে তাই অফিস একটু ঝাড় ফু দিচ্ছে । একটা ছোট ছেলে ছিল টুকি টাকি কাজ করে দেওয়ার জন্য সেও চলে গেছে, টাকা নাই বলে । একজন মহিলা সাথে দুই জন পুরুষ  আসছে । 
মহিলাঃ আপনি কি ডিটেকটিভ রায়হান রশিদ ? 
রায়হান রশিদঃ জ্বী, আমি রায়হান রশিদ । দয়া করে বসুন ।
মহিলাঃ ধন্যবাদ
র রশিদঃ আপনারাও বসুন, (পুরুষ দুইজনকে)
আচ্ছা, বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি? আপনার পরিচয়টা জানা হলো না ।
মহিলাঃ আমি শিলা পারভিন চৌধুরী, আমার স্বামীর নাম মোহাম্মদ আব্দুল হাই চৌধুরী প্রাক্তন আর্মি মেজর । আমার স্বামীর অনুরুধে আপনার কাছে আসা, বলতে পারেন অনিচ্ছা সত্যেও আপনার দারস্থ হয়েছি । একটানা বলে গেলেন কথাগুলো । তার মুখের দিকে তাকিয়েই আছে রায়হান রশিদ । 
র রশিদঃ স্যার-কে আমার সালাম জানাবেন । 
শিলা পারভিনঃ আপনার কাছে যে কারণে আসা, আপনাকে তা বললাম । আমার স্বামী চায় আপনি কাজটি করেন, আর যতটা গোপনে কাজ করা যায় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন । বুঝতেই পারছেন স্যোসাইটি আছে থাকতে হয় । পুলিশি ঝামেলা চাই না আরকি । 
র রশিদঃ জ্বী, একটা পিক দিবেন আর বাসার এড্র্যাস দিবেন । কাজের সুবিধার্থে লাগবে ।
মহিলাঃ পিক আমি নিয়ে এসেছি এই নেন । আমি আগামী পরশু আবার আসবো । আপনার যা জানার সব বলেছি তবুও যদি কিছু জানার থাকে এই নাম্বারে ফোন দিবেন ।  তাহলে আজ আমি আসি । 
র রশিদঃ কিছু নিবেন ? 
শিলা পারভিনঃ রায়হান রশিদের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ঘুরে চলে গেলো । 

নিজ চিয়ারে বসে বসে ভাবছে, স্যার না এসে মেডামকে কেনো পাঠালো? কোন কারণ ছাড়া এটা হতেই পারে না । যাইহোক, কাজ যেহুতু পেয়েছি আর বসে থাকলে হবে না তার আগে দুইটা কাজ আছে । এক পিচ্ছি কে একটা ফোন দেওয়া, দুই  থানায় যেতে হবে । 


তিনদিন পরঃ 

গাড়ির কর্কশ শব্দে কান ঝালা-ফালা হয়ে যাচ্ছে, এই মামা বামের রাস্তায় ঢুকে পড়ো আর পারছিনা, রিক্সা চালককে বললো রায়হান রশিদ । কেসটার সমাধান হইলে এবার ডাক্তার দেখাবো, আর হেলা-ফেলা নয় । পকেট থেকে একটা চিঠি বের করলো কিছুক্ষন চেয়ে থেকে পড়তে শুরু করলো রায়হান রশিদ । "তুমি এসেছিলে বসন্তে আবার চলেও গেলে বসন্তে আহ, তবে তুমি চলে যাওয়াতে আমার স্বপ্ন পূরণে কোন বাধা নাই ।" কাগজটি মুড়িয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দিলো । 

রিক্সা থেকে নেমে একটা গলির ভিতর হাটা শুরু করলো, কয়েক কদম পরেই বামে মুড় নিয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রইল, এখন রাত ১১ টা এখনই আসার সময় হয়েছে পিচ্ছিটার । পিচ্ছি হচ্ছে রায়হান রশিদের ইনফর্মার যাকে বলে তথ্য সরবরাহ কারী । পিচ্ছির বয়স আনুমানিক উনিশ কি কুড়ি হবে, লম্বায় খাটো তাই পিচ্ছি খেতাব ওর ভালো নাম আমজাদ হোসেন । পিচ্ছিকে যে দিন নাম জিজ্ঞাসা করা হয় তখন সে বলে আমার নাম পিচ্ছি । সেদিন রায়হান হেসে বলেছিল এখনো কি ফিটার খেতে হয় হাহাহহ...... 

পিচ্ছিঃ স্যার আমার ভালো নামও আছে । 

র রশিদঃ তাই নাকি তো ভালো নাম কি শুনি 

পিচ্ছিঃ আমার মায়ে আমারে আমজাদ করে ডাকে, মা মারা যাবার পর থেকে আমি রাস্তায় থাকি ঘুমাই তাই কেউ নাম জিগায়তো না, একটা হোটেলে কাম করতাম হোটেল মালিকে আমারে পিচ্ছি কইত আর কি আমার নাম পিচ্ছি হয়েগেলো । 

র রশিদঃ হুম, বুঝলাম । ঠিক আছে আমি তোমায় আমজাদ হোসেন বলেই ডাকবো । 

পিচ্ছিঃ আচ্ছা স্যার, এহন কন আমার কি কাম করা লাগবো?  

র রশিদঃ তুমি এখন থেকে আমার এইখানে কাজ করবা, আমার সাথে খাবা চাইলে আমার এখানেও ঘুমাতে পারো । 

আমজাদঃ আচ্ছা স্যার । আমজাদ এর আজ খুব আনন্দের দিন কারণ অনেক থেকে একটা কাজের জন্য অনেক ঘুরাঘুরি করছে কিন্তু পাচ্ছে না। 

র রশিদঃ শুনো আমি তোমায় একটা জাক দিচ্ছি, মনে রাখবা আমি তোমায় চিনি না তুমিও না । কাছে আসো বুঝিয়ে দিচ্ছি ( কানের কাছে ফিসির ফিসির শব্দ) 

র রশিদঃ বুজাইতে পারছি ? 

আমজাদঃ জ্বী স্যার, আমি তাহলে যাই ।


আজ তিনদিন হইল এখানেই দেখা হবে আমজাদ উরুফে পিচ্ছির সাথে, কিছু খবরের জন্য তাকে পাঠাইতে হইছিল মহাখালির বস্তিতে । রায়হান রশিদ সারা শরিলে কালো কাপরে ঢাকা । শিতের মৌসুম কেউ সন্দেহ করবে না, তাই সুবিধা একটু বেশি পাচ্ছে রায়হান রশিদ । 

আচ্ছা আমজাদ আসতে এতো দেরি করছে কেনো ......? 

হঠাৎ গলির ভিতর অন্ধকারে কেউ দাঁড়িয়ে আছে । রায়হান রশিদের ষষ্ট ইন্দ্রিয় বলছে লক্ষণ ভালো না, চিন্তায় ছেদ পড়লো যখন দেখলো সামনে এক লোক পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে কাকে যেনো খুঁজছে । রায়হান এর থেকে পাঁচ হাত দূরেই দাঁড়িয়ে আছে অস্ত্রধারী লোকটি । রায়হান টু শব্দ না করেই দাঁড়িয়ে আছে । হঠাৎ রায়হান দেখলো পিচ্ছি আমজাদ গলীতে না ঢুকে গলির মাথায় দাঁড়িয়ে আছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনা শুরু করলো । 

গলির অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে বাজ, অপেক্ষা করছে বস আফতাবের সংকেতের উপর । আজ সে কাউকে মারবে না শুধু ভয় দেখাবে, বেটা কিনা বসের উপর দিয়ে কথা বলে । বস বলে দিয়েছে গলির মাথায় ছিড়া গেঞ্জি পরা ছেলে আকাশের তারা গুনবে সেই সময় চৌধুরী ভিলায় যেতে হবে । বাজের একটা অভ্যাস সে মোবাইল ব্যবহার করে না, মোবাইল নাকি সময় অপচয় যন্ত্র । 

রায়হান রশিদ অন্ধকারের লোকটার কথা ভাবছে কে সে? কি চায় এখানে? কাকে মারতে চায় নাকি হুমকি ? 

এই সব প্রশ্নের একটাই সমাধার দেখতে হবে কে সে ? এই মূহর্তে সে এখানে আছে অন্ধকারের লোকটা জানে না, জানলে অবশ্যই রিয়েক্ট করতো । রায়হান সিধ্যান্ত নিলো এই লোকের সাথে পিচ্ছির কানেকশন টা কোথায় । পিচ্ছিত জানে আমি এখানে ও না এসে ওখানে দাড়ালো কেনো, পিচ্ছির সাথে কি ... না না না । মানে পিচ্ছি কি তাকে নাকি অন্ধাকারের সংকেত । জানতে হলে দেখতে হবে কি হয় । 


চলবে ............

Comments